ঢাকা , রবিবার, ১৮ মে ২০২৫ , ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ই-পেপার
সংবাদ শিরোনাম
কোস্টগার্ডের আধুনিকায়নে হেলিকপ্টার সংযুক্ত করা হবে : স্বরাষ্ট উপদেষ্টা কোনো এক ব্যক্তি জুলাই অভ্যুত্থান ঘটায়নি-ফরহাদ মজহার সীমান্তে পুশইন ঠেকাতে জনগণের সহায়তা চাইলেন বিজিবি প্রধান ঢাবি শিক্ষার্থী সাম্য হত্যায় তিনজন রিমান্ডে এনবিআরে কলম বিরতি, রাজস্ব প্রশাসনে অচলাবস্থা পোশাক শিল্পের উদ্যোক্তারা জ্বালানির নিশ্চিয়তা চান এনবিআর বিলুপ্তিতে রাজস্ব ব্যবস্থা নির্বাহী বিভাগের করায়ত্ত হওয়ার ঝুঁকি -টিআইবি ঢাকার যেসব এলাকায় সভা সমাবেশ-মিছিল নিষিদ্ধ হলো-আইএসপিআর করিডোরের নামে আরেকটা ইসরায়েল গড়তে দেয়া যাবে না-ফজলুর রহমান জনগণের রোষানলে পড়ার আগে নির্বাচন দিন-ফারুক বাংলাদেশকে এড়িয়ে সমুদ্রপথে কলকাতার সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চল যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই-দেবপ্রিয় ভট্টাচার্য মাইক্রোক্রেডিটকে এনজিওর ধারণা থেকে বেরিয়ে ব্যাংকিংয়ে আসতে হবে আজ বিক্ষোভের ডাক কারিগরি শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের হুঁশিয়ারি ৭ কলেজের গাজীপুরে একটি পোশাক কারখানার শতাধিক শ্রমিক অসুস্থ টেক্সটাইল নিয়ে কাজ করার সুযোগ রয়েছে-বুটেক্স উপাচার্য সিরাজগঞ্জে কৃষককে পিটিয়ে হত্যা অভিযুক্তের বাড়ি পোড়ালো বিক্ষুব্ধরা ইশরাককে মেয়র পদে না বসানোয় ক্ষোভ বাড়ছে ডেঙ্গুতে একজনের মৃত্যু হাসপাতালে ভর্তি ৭৯
ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ

বিপর্যয়ে ট্রাভেল এজেন্সি খাত

  • আপলোড সময় : ২৪-০৩-২০২৫ ১০:৩১:২৩ অপরাহ্ন
  • আপডেট সময় : ২৪-০৩-২০২৫ ১০:৩১:২৩ অপরাহ্ন
বিপর্যয়ে ট্রাভেল এজেন্সি খাত
গত কয়েক মাস ধরে অস্থিরতা বিরাজ করছেন পর্যটন খাতের ব্যবসায়ী অঙ্গনে। পতিত শেখ হাসিনার সরকারের দোসরদেও সিন্ডিকেটের কারণে বন্ধ হতে বসেছে এ খাতের ৫ হাজারেরও অধিক ট্রাভেল এজেন্সি। যা নিয়ে ট্রাভেল ব্যবসায়ীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ ও অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে ব্যবস্থা নেয়া না হলেও পুরো খাতটি বিপর্যয়ের মধ্য পড়বে বলে দাবি করছেন সংশ্লিষ্টরা। ফ্যাসিস্ট হাসিনার দোসর আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ এর নেতৃত্বাধীন আটাবের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে দ্রুত আটাবে প্রশাসক নিয়োগ করার দাবি জানিয়েছেন তারা। মূলত ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসায় বর্তমানে দুটি বলয় সৃষ্টি হয়েছে। এর মধ্যে আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ এর নেতৃত্বাধীন একটি বলয়, যারা গত সরকারের দোসর হিসেবে পরিচিত। আরেক টি বলয় রয়েছে আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ও মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান চৌধুরীর নেতৃত্বে, যারা বিএনপি-জামায়াত পন্থী হিসেবে পরিচিত। দুটি বলয়ের পরস্পর বিরোধী অভিযোগ আর তৎপরতায় কঠোর পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে সরকার। যার ফলশ্রুতিতে বন্ধ হতে বসেছে এ খাতের ৫ হাজারেরও অধিক ট্রাভেল এজেন্সি।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশ (আটাব) সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক পতিত স্বৈরাচার সরকারের দোসর। কিন্তু ঐ সরকারের পতনের পরও তারা এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে। শুধু বহাল নয়, একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিএনপি-জামায়াত পন্থী ব্যবসায়ীদের হয়রানি করছেন। এমনকি স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পর হাসিনাকে বাংলাদেশে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করার যে ষড়যন্ত্র হচ্ছে তা বাস্তবায়ন করার আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে তারা। যার কারণে আটাবের বিতর্কিত কমিটি বাতিল করে দ্রুত আটাবে প্রশাসক নিয়োগ করে পরবর্তী কার্যক্রম চালানোর জন্য আটাব সংস্কার পরিষদের আহ্বায়ক ও মঈন ট্রাভেলসের স্বত্বাধিকারী মো. গোফরান চৌধুরী মন্ত্রণালয়ের অভিযোগ করেছেন।
অভিযোগে বলা হয়, বর্তমান আটাব কমিটির সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ ও মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত সালেহসহ প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগপন্থী। স্বৈরাচার হাসিনার পতনের পরও তারা আটাব কমিটিতে নির্বিঘ্নে রয়েছে এবং বিভিন্নভাবে নৈরাজ্য সৃষ্টি করে যাচ্ছে। তারা আটাব অনলাইন নামক একটি (ওটিএ-অনলাইন ট্রাভেল এজেন্সি) প্রতিষ্ঠা করে যা বাণিজ্য সংঘ বিধি ও আটাব সদস্যদের স্বার্থের পরিপন্থী। আটাব অনলাইনকে ব্যবহার করে আবদুস সালাম আরেফের মালিকানাধীন ট্রাভেল এজেন্সি এয়ার স্পিড (প্রাঃ) লিঃ এবং মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ এর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান সায়মন ওভারসীজের নামে চেক ইস্যু করে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করে আটাব অনলাইনকে বিলুপ্ত ঘোষণা করেছেন। তারা শেয়ারহোল্ডারদের কোনো টাকা ফেরত দেয়নি। অভিযোগ পত্রে আরো উল্লেখ করা হয়, আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় নেতা বাহাউদ্দিন নাসিমের আত্মীয় পরিচয়ে এবং প্রশাসনের সহায়তায় ২০১১ সাল থেকে নিয়ম রক্ষার নির্বাচন দিয়ে ২ বার মহাসচিব এবং বর্তমান সভাপতি হিসেবে আটাব দখল করে আছেন। ভৌতিক ভোটার তালিকা, কেন্দ্র দখল, জাল ভোট এবং প্রতিপক্ষকে কেন্দ্র থেকে বের করে দিয়ে স্বঘোষিত ফলাফল নিয়ে বার বার নির্বাচিত হয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেছেন। জুলাই-আগস্ট ২০২৪ স্বৈরাচার শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে যে গণ আন্দোলন হয়েছিল তা প্রতিহত করার জন্য শেখ হাসিনার বাংলাদেশের শীর্ষ ব্যবসায়ীদের নিয়ে ৩ আগস্ট ২০২৪ যে ষড়যন্ত্রমূলক সভাটি করেছিলেন সেখানে বর্তমান আটাব সভাপতি আবদুস সালাম আরেফ উপস্থিত ছিলেন। আটাব মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা মরহুম মুহায়মিন সালেহ এর কন্যা। আফসিয়া জান্নাত সালেহ ও পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে আওয়ামী লীগ নেত্রী পরিচয়ে আটাব নেতৃত্বে আসেন এবং নিয়ম রক্ষার নির্বাচনে একাধিকবার নির্বাচিত হয়ে কমিটির সকলকে নিয়ে টুঙ্গিপাড়ায় শেখ মুজিবুর রহমানের মাজার জিয়ারত করেন।  আটাব মহাসচিব মিসেস আফসিয়া জান্নাত সালেহ বলেন, যারা টিকিট সিন্ডিকেট করে এক লাখ টাকার টিকিট দুই লাখ টাকায় বিক্রি করতে পারছে না সেই চক্রই আটাব সংস্কার পরিষদের নামে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আটাবের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ দিয়েছে। ফ্যাসিস্ট বিগত সরকারের দোসর বলে আমাদের যে তকমা দেয়া হচ্ছে তা সঠিক না।
জানা যায়, দেশে বর্তমানে ৫৭৪৬টি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি রয়েছে। তাদের মধ্যে মাত্র ৯৭০টি ট্রাভেল এজেন্সি আয়াটার স্বীকৃতিপ্রাপ্ত। ৯৭০টির মধ্যে কেবলমাত্র ৩৫০টি ট্রাভেল এজেন্সির কাছে এমিরেটস এয়ারলাইনস, কাতার এয়ারওয়েজ, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, সৌদি অ্যারাবিয়ান এয়ারলাইনসসহ বড় বড় এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির অনুমতি (ক্যাপিং) রয়েছে। এমনকি রাষ্ট্রীয় পতাকাবাহী বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির অথরিটি পেতে হলে আয়াটাসহ সবমিলে ৪০ লাখ টাকা অগ্রিম জমা দিতে হয়। এ ছাড়া এয়ার অ্যারাবিয়া, ইন্ডিগো, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজের মতো বাজেট এয়ারলাইনস রয়েছে, যাদের টিকিট আয়াটাতে পাওয়া যায় না। দেশের ৫ হাজারেরও বেশি লাইসেন্সধারী ট্রাভেল এজেন্সি টিকিট সংগ্রহের জন্য এই ৩৫০টি ট্রাভেল এজেন্সির ওপর নির্ভরশীল। এ অবস্থায় এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে টিকিট কেনাবেচা করতে না পারলে ৫ হাজারের বেশি লাইসেন্সপ্রাপ্ত মাঝারি ও ছোট পরিধির প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়ে যাবে। পরিপত্রের খসড়ার (ণ) ধারায় বলা হয়েছে, ‘এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য ট্রাভেল এজেন্সির সঙ্গে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় করতে পারবে না। ’ খসড়া পরিপত্রের এই ধারার বিরোধিতা করে ট্রাভেল এজেন্সিগুলো বলছে, বিশ্বব্যাপী ট্রাভেল ব্যবসায় এজেন্ট টু এজেন্ট (বি-টু-বি) মডেল প্রচলিত রয়েছে। যেখানে এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট বিক্রি করতে পারে। বাংলাদেশে এই নিয়মের ব্যত্যয় হলে স্থানীয় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না। পাশাপাশি এই সেক্টরের সঙ্গে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সংশ্লিষ্ট লাখ লাখ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
খসড়া পরিপত্রের (ঙ) ধারায় বলা হয়েছে, ট্রাভেল এজেন্সি ব্যবসা করার জন্য আবশ্যিকভাবে ইন্টারন্যাশনাল এয়ার ট্রান্সপোর্ট অ্যাসোসিয়েশন  আয়াটার স্বীকৃতি ও সদস্যপদ নিতে হবে। এজেন্সির মালিকরা বলছে, আয়াটা হচ্ছে একটি টিকিট সেলিং প্ল্যাটফর্ম। পৃথিবীতে দুই ধরনের ট্রাভেল এজেন্সি থাকে। আয়াটা এবং নন-আয়াটা ট্রাভেল এজেন্সি। তবে পৃথিবীর কোথাও ট্রাভেল এজেন্সির ব্যবসা করার জন্য আয়াটার মাধ্যমে টিকিট বিক্রি বাধ্যতামূলক নয়।
জানা গেছে, সাধারণত বড় বড় ট্রাভেল এজেন্সিগুলো আয়াটার সদস্যপদ লাভ করে। কারণ আয়াটায় সব এয়ারলাইনসের টিকিট বিক্রির অথরিটি পেতে হলে কোটি কোটি টাকার ব্যাংক গ্যারান্টির পাশাপাশি কয়েক বছর অপেক্ষা করতে হয়। তাছাড়া আয়াটায় কম টাকার ব্যাংক গ্যারান্টিতে সব এয়ারলাইনসের টিকিট কাটার অনুমতি পাওয়া যায় না। একটি এজেন্সিকে আয়াটার সদস্যপদের জন্য আবেদন করতে হলে কমপক্ষে ৬ মাস ব্যবসা করতে হয়। পাশাপাশি সর্বনিম্ন ৩০ লাখ টাকার ব্যাংক গ্যারান্টিসহ আরও নানা কাগজপত্রের আয়াটার বাংলাদেশের কান্ট্রি ম্যানেজার বরাবর জমা দিতে হয়। সব কাগজপত্র ঠিক থাকলে এই ৩০ লাখ টাকার গ্যারান্টিতে মাত্র ৩-৪টি এয়ারলাইনসের টিকিট কাটার অনুমতি পাওয়া যায়। ট্রাভেল এজেন্সি গ্যারান্টিকৃত অর্থের সর্বোচ্চ ৭০ শতাংশ অর্থাৎ ২১ লাখ টাকার টিকিট কিনতে পারে।
বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, সরকার কর্তৃক নিবন্ধিত এজেন্সিগুলোর মধ্যে ৪৪৭৬টি ৮৩ শতাংশ প্রতিষ্ঠানের আয়াটার স্বীকৃতিপত্র নেই। ফলে নতুন পরিপত্র জারির সঙ্গে সঙ্গে এই এজেন্সিগুলো আর টিকিট বিক্রি করতে পারবে না। ফলে টিকিটের সংকট দেখা দেবে, ভোগান্তিতে পড়বে যাত্রী সাধারণ। এছাড়াও ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে আয়াটার স্বীকৃতিপত্র পাওয়া সব ট্রাভেল এজেন্সিগুলোই ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, ফেনী, নোয়াখালী ও রাজশাহী শহরে। বর্তমানে বাকি শহরগুলোতে লাইসেন্সপ্রাপ্ত এক ট্রাভেল এজেন্সি অন্য ট্রাভেল এজেন্সির মাধ্যমে টিকিট ক্রয়-বিক্রয় করে ব্যবসা পরিচালনা করছে। তবে নতুন সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে দেশের আনাচে-কানাচে থাকা ৫ হাজার ২শ ট্রাভেল এজেন্সির কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যাবে। ফলে এসব শহরের বাইরের যাত্রীদের টিকিট কাটতে কষ্ট করে তাদের পার্শ্ববর্তী জেলা শহরের আয়াটা ট্রাভেল এজেন্টের কাছে যেতে হবে, এতে টিকিটের মূল্য বেড়ে যাবে।
 

নিউজটি আপডেট করেছেন : Dainik Janata

কমেন্ট বক্স
সর্বশেষ সংবাদ